নোটিস বোর্ড

আপনিও হয়ে উঠুন আপনি নাগরিক সাংবাদিক

আপনিও হয়ে উঠুন আপনি নাগরিক সাংবাদিক "নাগরিক সাংবাদিক বাংলাদেশ" এর স্পর্শে। নগর ও নাগরিক সমস্যা সহ যে কোন বিষয়ে আপনার লেখে ছবি...

খোলা জানালা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
খোলা জানালা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯

ইলিশ বন্দনা! - নাগরিক সাংবাদিক সুরঞ্জনা মায়া

ইলিশ বন্দনা! - নাগরিক সাংবাদিক সুরঞ্জনা মায়া
ইলিশ বন্দনা! - নাগরিক সাংবাদিক সুরঞ্জনা মায়া
ইলিশ বন্দনা! - নাগরিক সাংবাদিক সুরঞ্জনা মায়া
নাগরিক সাংবাদিক সুরঞ্জনা মায়া

বর্ষায় ইলিশ বন্দনা না হলে কি চলে? বারবার, বহুবার চর্বিত, চর্বনেও বাংগালীর ইলিশ বন্দনা একটুও পুরনো হয়না, এক ঘেয়ে লাগেনা। ঠিক ছেলেবেলার ইলশে দিনগুলোর মত। তখন বর্ষা মানেই ছিলো অঝোর বর্ষন, অথবা টিপটিপ ইলিশেগুড়ি! দুপুরে ভাতের পাতে বসে ভাইয়া, ইতুর শুরু হতো ঘ্যান ঘ্যান! -
" আজও ইলিশ! ইলিশ খেতে খেতে আর ভাল্লাগেনা"! -

- বর্ষার দিনে ইলিশ ছাড়া আর কোন মাছ আছে বাজারে? এখন খেয়ে নে, রাতে ডিম করে দেবো"!


বাংগালী মধ্যবিত্তের এই চিত্র ছিলো তখন খুবই সাধারন! ইলিশ ছিলো বর্ষায় জলের মত সস্তা! ইলিশের মৌসুমে অন্য বড় মাছের দাম যেত বেড়ে। ছোট মাছ বাজারে প্রচুর পাওয়া গেলেও কাঁটার ভয়ে খুব কমই সেসব ঘরে আসতো।
গরমের ছুটিতে নানাবাড়ি গেলেও খেতে হতো ইলিশ! সে ইলিশ আবার স্বাদে আরো বেড়ে! বাড়ির সামনের বাজার থেকে এক টাকা/ দেড়টাকায় এক জোড়া বড় পদ্মার টাটকা ইলিশ কিনে আমার হাতে দিয়ে নানা স্কুলের দিকে রওনা দিতেন। কখনও কাঠের পিপে থেকে টুকরো করা কালচে রঙ এর নোনা ইলিশও কলাপাতায় মুড়ে হাতে উঠিয়ে দিতো মাছওয়ালা। জোড়া মাছের কানকোতে কলার বাসনা ঝুলিয়ে, কলাপাতার পোটলা বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে এক ছুটে বাড়ি ফিরে নানীর হাতে পোটলা দিয়ে মাছদুটো নিয়ে সোজা কলতলায়। চামচ দিয়ে মাছের আঁশ ছাড়িয়ে নানীর কাছে নিয়ে যেতাম। মাটির মালসায় মাছ রেখে নানী বটি পেতে বসতেন। আমি বেড়ালের মত মাছের সামনে বসে থাকতাম। নানী প্রথমেই মাছ দুটোর মাথা লেজ আলাদা করে ধুয়ে নিতেন। তারপর উনার রান্নাঘরের পুটলি থেকে পরিস্কার শাড়ির টুকরো বের করে আলতো হাতে মাছের শরীর মুছে গাদা, পেটি আলাদা করে কেটে টুকরোগুলো আবার ঐ কাপড়ে ভাল করে মুছে রাখতেন। - ও নানী, মাছ আর ধোবেন না? - না, মনি, ইলিশ মাছ কাটার পরে ধুলি পার স্বাদ কমে যাবিনি"! তারপর চুলোয় দুটো পাটখঁড়ি গুঁজে দিয়ে লোহার কালো কুচকুচে কড়াইটা বসিয়ে দিয়ে কিছু মাছে নুন, হলুদ মাখাতেন। আলতো হাতে সামান্য সর্ষের তেল দিয়ে নিপুণ হাতে কড়াই ঘুরিয়ে তেলটা সারা কড়াইতে ছড়িয়ে দিতেন। একে একে মসলা মাখানো মাছ ছাড়তেন। ছ্যাৎ! ছ্যাৎ! মাছ ভেজে উঠিয়ে নেবার পর কড়াইতে অনেক বেশী তেল জমে থাকতো। সেই তেল অন্য একটা কাঁসার বাটিতে ঢেলে মাছ ভাজার প্লেটের পাশে বসিয়ে আমার হাতে দিতেন। আমি সাবধানে সেটা নিয়ে রান্নাঘরের মিটসেফে তুলে রাখতাম। সাদা মেনি, আর হলদে হুলো করুন চোখে মিটসেফের বাইরে ঘুরোঘুরি করতো। নানী আবার কড়াই বসাতেন। এবার হবে ইলিশের ঝোল। অল্প সর্ষের তেলে অল্প কুঁচোনো পেঁয়াজ ছেড়ে দ্রুত হাতে নাড়তেন। পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে তাতে বাটা হলুদ, জিরে, নুন দিয়ে কষাতেন। অল্প অল্প করে পানি দিতেন। খুন্তির ডগাটা নানীর নাকের সামনে নিয়ে শুঁকে দেখে আনমনে মাথা নেড়ে মাছের টুকরো কড়াইতে বিছিয়ে দিয়ে ঢাকা চাপা দিয়ে চুলো থেকে খঁড়ি একটু বের করে রাখতেন। আবার ঢাকা খুলে আলতো হাতে মাছগুলো উলটে দিতেন। তারপর দিতেন পানি। আর কয়েকটা কাঁচালংকা। চুলার নিচে আরো দুটো পাটখড়িও গুঁজে দিয়ে নানী সোজা হয়ে বসে আচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছতেন। দুধ সাদা নানীর মুখ তখন লাল টুকটুকে হয়ে যেতো। নাকের মসুরদানা ফুলে ঝিলিক দিয়ে বলতেন, - বুবু, আমার পানের বাটাটা নিয়ে আইসো দিনি! আমি ছুটে যেয়ে নানীর বাটা এনে দিতাম। নানী পানপাতায় চুন, খয়ের মিশিয়ে এক কুচি সুপুরি তার উপর রেখে পানটাকে সুন্দর করে খিলি বানিয়ে মুখে দিতেন। মুখটা উপরে তুলে এক চিমটি জর্দা ফেলতেন মুখে। আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতাম। তারপরই হাত ধুয়ে কড়াই ধরে হালকা নাড়িয়ে চুলো থেকে নামিয়ে বড় কাঁসার বাটিতে ঢেলে দিতেন মাছের ঝোল। পাতলা, সোনালি ঝোলের মধ্যে রুপোলী ইলিশ খন্ড মুখ লুকিয়ে থাকতো। তাদের সংগ দিতো কিছু আস্ত সবুজ কাঁচালংকা! ইলিশের মন মাতানো ঘ্রানে ভরে যেত চারিদিক। সেই সময়, নানী, ইলিশ, নানীর হাতের সোনালি ঝোল, সবই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। শুধু স্মৃতিটুকু আজও রয়ে গেছে।

সংসার জীবনে অনেক চেষ্টা করেও নানীর হাতের সেই ঝোলের সোনালি রঙ আনতে পারিনি। আম্মা পারতেন। ইদানিং ফেবুতে ইলিশের পানিখোলা রান্নার কির্তন শুনে করে ফেললাম পানিখোলা। কিন্তু পেঁয়াজ ভেসে থাকাটা পছন্দ হলোনা। মনে হচ্ছে এর চেয়ে অল্প পেঁয়াজ তেলে ভেজে কষিয়ে নানীর মত রান্না করলেই ভাল হতো।